ভোরের গান


~সিলভিয়া প্লাথ

ভালোবাসা তোমাকে টেনে নিয়ে চলেছে পেটমোটা একটা সোনার ঘড়ির মত।
পায়ের পাতায় দাইমা চাটি মারতেই তোমার নগ্ন চীত্‌কার
সবকিছুর মাঝে নিজ জায়গা করে নিল।

আমাদের কন্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি, তোমার আগমনকে আরো বড় করে দেখালনতুন মূর্তি।
এক শীতল যাদুঘরে, তোমার নগ্নতা
ঝাপসা করে দেয় আমাদের নিরাপত্তাকে। আমরা গোল হ’য়ে দাঁড়িয়ে থাকি শূন্য দেয়ালের মত।

এক আয়নাকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরিয়ে
প্রতিবিম্বিত করতে চায়, বাতাসের হাতে
ধীরে ধীরে নিজেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় যে মেঘ
আমি তারচেয়ে বেশি তোমার মা নই

আলোর দিকে ছুটে যাওয়া রাতের পোকাগুলোর মত তোমার শ্বাসপ্রশ্বাস সারারাত 
চ্যাপ্টা গোলাপি গোলাপগুলোর মাঝে কাঁপতে থাকে। শুনবার জন্য আমি জেগে উঠিঃ
এক দূরের সমুদ্র আমার কানের ভিতর এগিয়ে আসে।

একটা চীত্‌কার, আর আমি বিছানা থেকে টলতে টলতে উঠতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ি,
গাভীর মত ভারী আর ফুলে ফুলে ভরা ভিক্টোরিয়ান নাইটগাউন আমার
তোমার মুখ খুলে যায়, বিড়ালের পরিষ্কার মুখের মত সে মুখ। জানালার চারকোনাটা

শাদা হ’তে হ’তে গিলে ফেলে নিষ্প্রভ তারা। আর এখন তুমি পরখ করে দেখছ
মুঠোভর্তি টুকরো টুকরো কাগজগুলো;
উজ্জ্বল স্বরবর্ণ সব উঁচু থেকে উঁচুতে উড়ে যায় বেলুনের মত।


মূলঃ সিলভিয়া প্লাথ
অনুবাদঃ কল্যাণী রমা

আমি?
একলা হাঁটি; পায়ের নিচ থেকে
মাঝরাতের রাস্তাটা পাক খেয়ে
নিজেই ঘুরতে থাকে;
আর যেই চোখ বুজি
সব স্বপ্নিল বাড়িই নিভে যায়;
তখন আমার ইচ্ছাতেই শুধু
ছাদের তেকোণা থেকে চাঁদের স্বর্গীয় রূপ
ওই উঁচুতে ঝুলতে থাকে

আমি
বাড়িগুলোকে ক্রমশ ছোট করে ফেলি
গাছগুলো দূরে যেতে যেতে হারিয়ে যায়;
আমার দৃষ্টির সীমানায়
শূন্যে পুতুলের মত মানুষগুলো, দুলছে ওরা
কিভাবে ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে না জেনেই
চুমু খাচ্ছে, হাসছে, মাতাল হচ্ছে
অথচ আমার চোখের পলক
পড়লেই সকলের মৃত্যু

আমি
যখন ভালো থাকি, যখন খুশি থাকি,
ঘাসের গায়ে সবুজ রঙ এঁকে দিই
আকাশের বুকে নীল গয়না পরাই,
সূর্যকে সোণালি;
তবু সব ধূসর-মন-খারাপে
আমার হাতেই সব শক্তি
সব রঙ ধুয়ে ফেলি,
কোন ফুল কোথাও ফোটে না

আমি
জানি তুমি আস, এসে দাঁড়াও আমার পাশে- জীবন্ত, উজ্জ্বল,
অস্বীকার করলেও তোমার জন্ম
আমার মাথার ভিতর থেকেই,
দেখ তবুও ভাবছ
প্রেম এমন আগুন জ্বালাতে পারে যে
শরীর, মাংস, চামড়া সবই সত্যি বলে মনে হয়,
প্রিয়, তোমার সৌন্দর্য, মেধা, সব সবকিছু শুধু

তোমাকে আমার উপহার  

মন্তব্যসমূহ



কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।
প্রকাশিত বই -
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলো – ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস – অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ হ’তে জাগি – হেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ।