সিলভিয়ার মৃত্যু

(সিলভিয়া প্লাথের জন্য)
মূলঃ এ্যান সেক্সটন

অনুবাদঃ কল্যাণী রমা

ওহ্‌ সিলভিয়া, সিলভিয়া,
পাথর আর চামচ বোঝাই একটা মৃত বাক্স

দু’টো ছেলেমেয়ে, দু'টো উল্কা নিয়ে
একটা ছোট খেলার ঘরে বাঁধনছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছ,

বিছানার চাদরে তোমার মুখ,
কড়িকাঠে তোমার মুখ, তোমার মুখ নীরব প্রার্থনায় জড়িয়ে,

(সিলভিয়া, সিলভিয়া
ডেভনশায়ার থেকে সেই আলু আর মৌমাছির চাষ
করবে বলে লিখবার পর
তুমি কোথায় গেলে?)

কিসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলে?
কিভাবে তার উপর শুয়ে পড়েছিলে?
চোর-
কিভাবে তুমি হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে গিয়েছিলে,

একা একা হামাগুড়ি দিয়ে মৃত্যুর ভিতর,
যে মৃত্যু আমি এত বেশি করে চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম এতদিন ধরে,

সেই মৃত্যু যা কিনা আমরা দু’জনই
ছেলেমানুষের মত পিছনে ফেলে এসেছিলাম, এমনই তো বলেছিলাম
এই সেই মৃত্যু যা আমরা আমাদের রোগা প্যাকাটি শরীরের স্তনের উপর ঝুলিয়ে ঘুরতাম,

এই সেই মৃত্যু যার কথা আমরা এতবার বলেছি,
যতবারই বোস্টনে তিনটা এক্সট্রা ড্রাই মার্টিনি গলায় ঢেলেছি,

সেই মৃত্যু যা বিশ্লেষক আর চিকিত্‌সার ঔষধের কথা বলত,
সেই মৃত্যু যা ষড়যন্ত্রকারী নতুন বউ-এর মত করে কথা বলত,

যে মৃত্যুর কথা ভেবে আমরা পান করেছিলাম,
মৃত্যুর উদ্দেশ্য আর তারপর তার নীরব দলিল?

(বোস্টনে মরতে বসা লোকেরা ক্যাব চড়ে যায়,
হ্যাঁ, আবার মৃত্যু, যে কিনা আমাদের প্রেমিকের সাথে বাড়ি যায়।)

ওহ্‌, সিলভিয়া, ওই ঘুম ঘুম চোখের ড্রামারকে আমার মনে আছে
পুরানো গল্প দিয়ে যে আমাদের চোখে আঘাত করেছিল,

আমরা কি ভীষণই না চাইতাম যে ও আসুক,
স্যাডিস্টের মত কিংবা নিউ ইয়র্কের পরির মত

ওর কাজটুকু করবার জন্য,
যেন বড় বেশি প্রয়োজন তাকে আমাদের, দেওয়াল কিংবা ক্রিবের গায়ে জানালার মত,

সেই সময় থেকে ও অপেক্ষা করছে
আমাদের হৃত্‌পিন্ডের নীচে, আমাদের আলমারির নীচে,

আর এখন আমি দেখতে পাচ্ছি যে সেই সময় থেকে
আমরা তাকে ভান্ডারে জমিয়ে রেখেছি
বছরের পর বছর, পুরানো সব আত্মহত্যা

আর আমি জানি তোমার মৃত্যুর খবরে
তার জন্য এক চরম তিক্ত স্বাদ যেন, লবণের মত,
(আর আমি,
আমিও।
আর এখন, সিলভিয়া,
আবার তুমি,
তুমি আবার মৃত্যুর সাথে,
সেই বাড়ি ফিরে আসা আমাদের প্রেমিকের সাথে।)

আর আমি বলি
আমার হাতগুলো কেবল ওই পাথুরে জায়গার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে,
তোমার মৃত্যু যে কি তা
তা কেবল এক পুরানো ফেলে আসা সম্পদ

তোমার কোন একটা কবিতা থেকে
ঝরে পড়া তিল?

(ওহ্‌ বন্ধু,
যতক্ষণ চাঁদটা বিচ্ছিরিভাবে ঝুলে আছে,
আর রাজা চলে গেছে,
রাণী হতভম্ব হয়ে বসে আছে
পানঘরের মাছিটার তো গান গেয়ে যেতেই হবে!)
ও আমার ছোট্ট মা,
তুমিও!
ওগো অদ্ভুত হল্যান্ডবাসিনী!
ওগো সোণালি চুলের মেয়ে!


~~~~~~~~~~~~~~~~~

অক্টোবরে পপিফুল
মূলঃ সিলভিয়া প্লাথ
অনুবাদঃ কল্যাণী রমা
~~~~~~~~~~~~
আজ সকালে এমন কি সূর্য-মেঘেরা পর্যন্ত অমন ঘাগড়া বশে রাখতে পারছে না।
পারছে না অ্যাম্বুলেন্সের নারীটি পর্যন্ত
যার কোটের ভিতর থেকে তার লাল হৃতপিন্ড স্তম্ভিত হ’য়ে ফুটে উঠছে-



উপহার, এক প্রেমের উপহার
একেবারে চায়নি
যা আকাশ



মলিন...আগুনের শিখায়
তার কার্বন মনোক্সাইড চোখ দিয়ে জ্বালিয়ে
বোলারদের নীচে নিষ্প্রভ হ’য়ে হঠাত্‌ থেমে যায়

হে ঈশ্বর, আমি কে
যে এইসব মুখ আমার জন্য আর্তনাদ করবে
এক নীহারকণার বনে, এক কর্নফ্লাওয়ারের ভোরে।





মন্তব্যসমূহ



কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।
প্রকাশিত বই -
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলো – ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস – অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ হ’তে জাগি – হেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ।