মা, জ্যাক আর বৃষ্টি

মূলঃ অ্যান সেক্সটন

আমার নিজের একটা ঘর আছে।
বৃষ্টি ঝরে সেই ঘরে। আমার কপালের হাড়ে গাছের থেকে
ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে বৃষ্টি, কিলবিলে পোকার মত।
বৃষ্টি পাগলের মত আমাকে  তাড়া করে ফেরে, সবসময় আর এই ঘর শুধু সেই
শব্দগুলোই উচ্চারণ করে যাদের আমি জন্ম দেব, একা।
কোথায় ঘরের তাক, কোথায় আপেলের মত শক্ত কাঠ অন্ধের মত
হাতড়ে হাতড়ে চলি। আলতো করে আঙ্গুল বুলাই কলমে সেইতো আমার ছুরি।
এই কলম দিয়েই হাতের মুঠোয় তুলে নিই নিজ আত্মা আর তারপর
ওই মৃত শিষ্যদের সাথেই সব আঁকড়ে ধরি আমি।
তবুও জানালার শার্সিতে বৃষ্টির অভিশাপ- লেখা হোক কবিতা

আমার চোখের মণিতে বৃষ্টি একটা আঙ্গুল।
বৃষ্টি পুরনো, অদরকারি সব গল্প নিয়ে শরীর ফুটো করেই ঢোকে...
আমি আস্তাবলের ঘোড়াটার মত ঘুমাতে যাই বিছানায়
ঘামে ভেজা নোনতা হাঁটু গ্রীষ্মের স্যাঁতস্যাঁতে বিছানাতে জড়োসড়ো করে
শুনতে পাই দেয়ালের ওপাশ থেকে ভেসে আসে আমাকে দেয়া বাবার চুমু
শুনতে পাই মা হৃত্‌পিন্ডের ধুকপুক ঢেউ-এর মত উঠছে আর নামছে।
জাহাজকে সাবধান করে বেজে বেজে কুয়াশার ভেঁপু
সমুদ্রটাকে চামড়ার মত চ্যাপ্টা করে ফেলে।
আমি কোনদিন কোন সাগরে যাইনি, আমার কোন পাসপোর্ট নেই।
আমি ছিলাম শুধু সেই ওদের কন্যা। হুইস্কি পাশের ঘরে
বাবাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। আর বাবা
সব ঝড়-জল পেরিয়ে নিজের জাহাজ বন্দরে এনেছিল।

বৃষ্টি, বৃষ্টি, ষোল বছর বয়সে বৃষ্টি
ছোট লেকটার ধারে আমি জ্যাক-এর সাথে শুয়ে সারারাত কাটিয়ে দিয়েছিলাম
অথচ কিছুই করিনি, সটান সোজা শুয়ে ছিলাম কড়াইশুঁটির মতই
আমরা শুধুমাত্র খেলা করবার জন্যই বীয়ার খেতে খেতে, তাস পিটিয়ে ব্রীজ খেলে
ল্যাম্পে কেরোসিন ভরে আলো জ্বেলে দিয়েছি, দাঁত মেজেছি
স্যান্ডউইচ আর চা বানিয়ে কেবিনের বিছানায় ঘুমাতে গেছি। আমি শুয়ে থেকেছি
এক অন্ধ হ্রদের মত, ঘুমের ভান করে গেছি ঠিক যখন জ্যাক পশমি চাদরের নিচে
খুঁজে গেছে আমার শরীর, সেই অদৃশ্য শরীর যা মেয়েরা লুকিয়ে রাখে।
সেই সব মিষ্টি মাতাল রাত আমরা ঝড়ের বুকে লাগাম পড়িয়ে ছুটে গেছি।

আজকাল জ্যাক গীর্জায় প্রার্থনাসভা করে
আর আমার মা নিজ শরীরের হাড়কেই ক্রাচ করে কবরে চলে গেছে।
জঙ্গলে বৃষ্টি ঝরছে, কাচের ভিতর বৃষ্টি ঝরছে
আর আমি আমার নিজের ঘরে একা। কি জানি হয়ত খুব বেশি বেশি ভাবি।
ঈশ্বরের চোখ থেকে মাছগুলো সাঁতার কেটে কেটে কোথাও যাচ্ছে। ওদের যেতে দাও।
মা আর জ্যাক স্বর্গ ভরে রেখেছে; ওরাই আমার নারীত্বর সব সনদপত্র।
পারের কাছাকাছি ভেসে আসে আমার জাহাজ। আমি তীরে এসে নামি ঘোড়ায় চড়ব বলে,
বাজিয়ে দেখব আমার গিটার, তারপর ওদের দুটো আলাদা নামকে সূর্যমুখি ফুলের মত
এক করে এঁকে দেব, আমার প্রতিদিনের ভাত-রুজি ভেল্কিবাজি করে যোগাড় করব

শুধু টিকে থাকবার জন্য, কোনভাবে শুধু টিকে থাকবার জন্য।

অক্টোবর, ১৯৬২

অ্যান সেক্সটন

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন



কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।
প্রকাশিত বই -
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলো – ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস – অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ হ’তে জাগি – হেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ।