বিয়ের রাত

মূলঃ অ্যান সেক্সটন
অনুবাদঃ কল্যাণী রমা

------
বোস্টনে সে এক সময় ছিল
তখনও বসন্ত আসেনি-ছোটখাট এক অনুষ্ঠান-
আর তারপর তা শেষ হয়ে গেল।
যেদিন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে, আমি মার্লবোরো স্ট্রীট ধরে হেঁটেছিলাম
চামড়ার মত একঘেয়ে গাছের ডালের নীচ দিয়ে
ড্রাইভারের হাতের গ্লাভস্‌-এর মত শক্ত গাছের ডালের নীচ দিয়ে
আমি বলেছিলাম,(শুধু তুমি চলে গিয়েছিলে বলে)
ম্যাগনোলিয়া ফুলে কেমন যেন এক দখিনা শব্দ ঝংকার আছে,
একেবারেই বোস্টনের মত নয়,
আর যা কিছুই ঘটেছিলো, সব গোলাপি,
আর সব খুব অল্প সময়ের জন্য,
অবিশ্বাস্য সব ঘটনা, মনে গেঁথে আছে।

একবারের মত ম্যাগনোলিয়ারা বসেছিলো, প্রত্যেকে গোলাপি পোশাকে,
নিশ্চিতভাবে বলা যায় সবাই ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে  ছিল।
সপ্তাহের পর সপ্তাহ কুঁড়িগুলো সুঠাম শরীরে দাঁড়িয়ে
ঠিক যেমনভাবে এডনা পিসীর বিয়েতে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম
ফ্লাওয়ার গার্ল হয়ে, বারো বছর বয়স।
ফুলগুলোর নিচ দিয়ে তোমার দিকে যেতে যেতে,
জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “ওরা কি নত হবে?”
দুইজন নত হয়ে একটা ডালের মাঝে,
গাল, কপাল, কাঁধ মেঝেতে?
কাউকেই বেমানান বলে মনে হয় নি আমার।
কেউই নেতিয়ে পড়ে নেই।
কারো শরীর থেকেই চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে না-
শঙ্খচিলের চকচকে ঠোঁটের মত অপেক্ষা করছে ওরা,
সেরকমই রুদ্ধ।

আমি রাতের পর রাত ওদের নীচে দাঁড়িয়ে থাকলাম, দ্বিধান্বিত,
আর তারপর আমার গাড়ি চালিয়ে চলে গিয়েছিলাম।
তবুও এক রাতে, এপ্রিলের রাতে
কেউ একজন(কেউ একজন!) প্রত্যেকটা কুঁড়ি ফুটিয়েছিল-
ভুল প্রমাণ করতে, ব্যঙ্গ করতে, তীক্ষ্ণ কিছু দিয়ে ছিদ্র করে দিতে!
পরেরদিন ফুলগুলো সব তীব্র রঙের,
ভেজা ভেজা, সত্যি বলতে কী কোন খুঁত নেই ওদের।
তারপর তারা আর গাদাগাদি ক’রে নয়।
তারা ভুলে গেল কিভাবে লুকাতে হয়।
কী ম্রিয়মানই না তারা ছিল,
এখন জমকালো, বাতাসে দুলে দুলে।
আর এই সবকিছুর মধ্যে এমন এক পরিবর্তন!
জমে উঠছিল আমোদ-প্রমোদ।

তারপর, যেমন হয় আর কী-
প্যারেডের মুখগুলোর মত,
আমি তোমাকে হারানো কিংবা ওদের হারানোর মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পেলাম না।
অনুষ্ঠানের পর ওরা একে একে ঝরে পড়ল,
একটা একটা ক’রে বাছাই করা,
একের পর এক আর্টিচোকের পাতার মত।
তারপর আমি আমার গাড়ির দিকে হেঁটে গেলাম – এলোমেলো পায়ে
রাস্তার পাশে ইঁটের সাইডওয়্যাকে পড়ে থাকা বেদনাদায়ক অবশেষটুকুর উপর দিয়ে,
আর এইটুকু জেনে যে কেউ একজন এক রাতে
বিপন্ন পায়ে এ পথ পেরিয়ে গেছে,
সময় হওয়ার আগেই।

[“The Wedding Night” কবিতার বাংলা ভাষান্তর। ১৯৬৪ সালের ২৭ শে এপ্রিল থেকে ১লা মে-এর মধ্যে লেখা। কবিতাটি “Live or Die(১৯৬৬) বই থেকে নেওয়া।]

মন্তব্যসমূহ



কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।
প্রকাশিত বই -
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলো – ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস – অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ হ’তে জাগি – হেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ।